উড়তে চায় না এমন কে আছে? এই প্রশ্নের উত্তর ইনডোর স্কাই ড্রাইভিং যেন নিজেই দিয়ে দেয়,যেখানে মাধ্যাকর্ষণকে উপহাস করে ঘূর্ণায়মান বাতাসে ভেসে বেড়ায় মানুষ।
অস্ট্রেলিয়ান ইনডোর স্কাইডাইভিং চ্যাম্পিয়নশিপে, প্রতিযোগীরা এক বিশাল বায়ু টানেলে প্রবেশ করে ,যেন এক বোতলবন্দি আকাশের ভেতরে। এই টানেলে ঘণ্টায় ২০০ কিমি গতির বাতাসে তৈরি হয় মুক্ত পতনের অনুকরণ, যা প্রকৃত স্কাইডাইভিংয়ের তুলনায় অনেক দীর্ঘস্থায়ী ও নিরাপদ।
স্কাইডাইভিং শব্দে ‘আকাশ’ এর উপস্থিতি যেন স্বাভাবিক বিষয়, তবে আই ফ্লাই এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর টানেলে বাতাসে ভেসে থাকা প্রতিযোগীরা বলতেই পারে আকাশের অংশটুকু তারা ধরে রেখেছেন, কেবল মাটি থেকে অনেক কাছাকাছি।
সিঙ্গাপুরের কাইরা পোহ, যিনি বর্তমানে ইনডোর স্কাইডাইভিং বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও রেড বুল অ্যাথলিট, এই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, “ইনডোর মানে, সীমিত জায়গায় অশেষ সময়। আর আকাশে উল্টো অসীম জায়গা, কিন্তু সময় সীমিত।”
২৩ বছর বয়সী পোহের খেলাধুলার শুরু হয়েছিল সাঁতার দিয়ে। তবে আট বছর বয়সে মায়ের বিজ্ঞাপন সংস্থার একটি প্রচারণায় আই ফ্লাই সিঙ্গাপুরের হয়ে শিশুকন্যা ফ্লায়ার হিসেবে অংশ নেন এবং তখনই উড়ার আনন্দে মুগ্ধ হন।
“আমি সবসময় রোলার কোস্টার, অ্যাডভেঞ্চার এই সব কিছু পছন্দ করতাম। তাই যখন মা বললেন ফ্লায়ার হতে, তখন একবিন্দুও দ্বিধা ছিল না,” বলেন পোহ।
ইনডোর স্কাইডাইভিং প্রতিযোগিতাগুলো বিভিন্ন দেশের চ্যাম্পিয়নশিপ ও বিশ্ব প্রতিযোগিতায় বিভক্ত। মূলত দুইটি বিভাগে প্রতিযোগিতা হয় ‘ডায়নামিক ও স্পিড’, এবং ‘ফ্রিস্টাইল’। ফ্রিস্টাইল বিভাগে সংগীতের সঙ্গে মিলিয়ে করা নান্দনিক ও কোরিওগ্রাফ করা ভঙ্গিমা যেন বাতাসে নাচার এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
“আমরা অনুপ্রেরণা নেই স্ট্রিট ড্যান্স, ব্যালে, জিমন্যাস্টিকস থেকে,” বলেন পোহ। “তবে আমাদের পরিবেশটা তিন-মাত্রিক বরফের ওপর স্কেটিংয়ের মতো, কিন্তু বাতাসে ভেসে।”
এই ভেসে থাকার সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে থাকে দারুণ শারীরিক শ্রম। পোহ প্রতিদিন ১৫ মিনিটের মধ্যে ৯০ সেকেন্ড করে বারবার অনুশীলন করেন, মাঝে বিশ্রাম নিয়ে দিনের ৭ ঘণ্টা পর্যন্ত। বিশ্ব প্রতিযোগিতা সামনে থাকলে সপ্তাহে ৬-৭ দিন অনুশীলন করতে হয় টানা চার মাস ধরে।
এজন্য প্রয়োজন হয় আলাদা শরীরচর্চারও। “টানেলের বাইরে আমাদের প্রচুর স্ট্রেংথ ট্রেনিং ও স্ট্রেচিং করতে হয়,” বলেন পোহ। “আমাদের পুরো শরীর এমনভাবে ঘোরে, যা সাধারণ জীবনে একেবারেই হয় না।”
অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরার প্রতিযোগী জ্যাকব কাপেলজ জানান, তাঁর ট্রেনিংয়ের বড় অংশ জুড়ে থাকে কাঁধের ব্যায়াম। “আমি সাধারণত ‘হেড-ডাউন’ অবস্থায় থাকি, যা বাস্তব স্কাইডাইভিংয়ের চেয়ে অনেক বেশি শারীরিক কষ্টসাধ্য।”
ইনডোর স্কাইডাইভিং এখন শুধুই বিনোদন নয়, বরং শিল্প ও ক্রীড়ার এক চমৎকার সংমিশ্রণ। যেখানে আকাশ না থেকেও মানুষ উড়ে বেড়ায় নিজের মেধা, দক্ষতা ও সাহসের জোরে। আকাশকে যেন তারা সত্যিই বোতলবন্দি করে ফেলেছে।